পটুয়াখালীর মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের সুফি মোতাহার উদ্দিন বাড়ি সংলগ্ন বড়হরপাড়া খালের ওপর আয়রণ ব্রিজের পুনর্নির্মাণ কাজ তিন বছর ধরে ঝুলে আছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), কলাপাড়া তিন বছর আগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও, কয়েক বছর ধরে কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারের অনুপস্থিতি এবং তদারকির অভাবে ব্রিজের নির্মাণ একপ্রকার থেমে গেছে।
এই অবস্থায় স্থানীয়রা নিজের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে কোনোরকমে চলাচল করছেন। কিন্তু কোমলমতি শিশুরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির অন্তত ২৫ জন শিশুর বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
এর আগেও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সাবিনা বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে সৌভাগ্যবশত প্রাণে বেঁচে যায়।
এই ব্রিজটির অনির্মিত অবস্থায় শুধু পৌরগোঁজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী নয়, ফাতেমা হাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্থানীয় মসজিদের মুসল্লিসহ আশেপাশের অন্তত তিন গ্রামের হাজারো মানুষ ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আজিজ জানান, “প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিশুরা এখন আর স্কুলে আসতে পারছে না। বাইরের গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্যও সমস্যাটা প্রকট।” প্রধান শিক্ষক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, “আগের আয়রণ ব্রিজটি মোটামুটি ভালো ছিল। নতুন করে নির্মাণের কথা বলে ভেঙে ফেলা হলেও কাজ আর শুরুই হয়নি। বারবার বলার পরও কোন অগ্রগতি নেই। মনে হচ্ছে ব্রিজটির কোনো অভিভাবকই নেই।”
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা বলে, “আমাগো এই চার (সাঁকো) পারাইয়া যাওয়া-আওয়া করতে সমস্যা শ্যাষ নাই।” একই অভিজ্ঞতা জানায় জহুরা, জান্নাতি, সাইফুল, সোহেল, মরিয়ম ও মনিরাও।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল গাজী বলেন, “ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ না হলে বাচ্চাদের লেখাপড়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ চাই।”
এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদেকুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে এলজিইডির একটি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের লাইসেন্স ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। ফলে নতুনভাবে আবার প্রক্রিয়া শুরু করে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”