হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এই মাসের দশ তারিখ—আশুরা—মুসলিম ইতিহাসে গভীর শোক, ত্যাগ আর বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেন (আ.) ও তাঁর ৭২ জন সঙ্গীর রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে চরম অবস্থানের এক ইতিহাস। সেই ইতিহাস আজও আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায় আমরা কি কারবালার শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে ধারণ করি?
ইয়াজিদের অন্যায় শাসনের সামনে ইমাম হোসেন (আ.) মাথা নত করেননি। তিনি জানতেন, আপসে জীবন বাঁচলেও সত্য নষ্ট হবে। তাই তিনি জীবন দিলেন, কিন্তু মিথ্যার সাথে আপস করলেন না। তপ্ত মরুভূমি, পিপাসার্ত শিশু, নিরস্ত্র পরিবার—সব হারিয়েও তিনি বেছে নিয়েছিলেন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে মৃত্যুকে।
কারবালা আমাদের শেখায়: ন্যায়ের জন্য মৃত্যু বরণ, অন্যায়ের সাথে আপসের চেয়ে শ্রেয়।
আজ অনেকেই আশুরাকে শুধুই কান্না, মাতম বা শোকের দিন হিসেবে পালন করেন। কিন্তু আশুরার প্রকৃত শিক্ষা হলো- প্রতিবাদ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। সত্যকে আগলে রাখার জন্য আত্মত্যাগ করা। আসলে কারবালা কেবল ইতিহাস নয়, এটি একটি জীবনবোধ।
আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই সমাজে অন্যায়, দুর্নীতি, বৈষম্য, প্রকৃতির উপর আঘাত চলছেই। প্রশ্ন হলো—আমরা কি হোসাইনি পথে হাঁটছি, নাকি ইয়াজিদি নীরবতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি?
একটি গাছ কাটলেও যদি কেউ প্রতিবাদ না করে, সেটাও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। নদী দখল, প্রকৃতি ধ্বংস, দুর্নীতির শিকার সাধারণ মানুষ—এসবের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানোর চেতনা আমাদের আশুরা থেকেই নিতে হবে। আমি শুধু একজন শিক্ষক নই, আমি “আমরা কলাপাড়াবাসী” এবং “পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন কলাপাড়া”র একজন সক্রিয় কর্মী। আমি আশুরার চেতনায় বিশ্বাস করি। প্রতিদিন যখন দেখি প্রকৃতির উপর চলছে আগ্রাসন, সাধারণ মানুষ হারাচ্ছে তাদের অধিকার—তখন হোসাইনি চেতনায় বলি, “এ লড়াই শুধু আমার একার নয়, এটা সময়ের সাথে সত্যের লড়াই।
আশুরা আমাদের কাঁদায়- তবে তা কেবল চোখের পানি নয়, অন্তরের প্রতিবাদ জাগায়। এই দিনে আমাদের শুধু শোক পালন নয়, শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।