নাজমুস সাকিব
গাছতলার হাট নেই, মাঝির কণ্ঠে গান নেই
বাংলার গ্রাম একসময় ছিল প্রাণবন্ত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আঁতুড়ঘর। গ্রামের মোড়ের পুরনো বটগাছের নিচে জমে উঠত হাট-বাজার। নৌকায় বসত ভ্রাম্যমাণ হাট। মাঝি বৈঠা চালাতে চালাতে গান ধরতেন-ও বাইয়া, নাও বাইওরে । কৃষকেরা ভোরবেলা মাঠে যেতেন, ঘামে ভিজে উঠত ধানক্ষেত। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন স্মৃতিমাত্র।
আধুনিক বাজার, শপিং কমপ্লেক্স আর শহরমুখী জীবনের কারণে গ্রামে আর আগের মতো গাছতলায় হাট বসে না। নৌকার হাটও হারিয়ে গেছে নদীপথের ব্যস্ততায়। মাঝির কণ্ঠ থেকে হারিয়ে গেছে নৌকার গান। অন্যদিকে, কৃষিক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। একসময় কৃষি ছিল গ্রামের প্রাণ, অথচ এখন অনেকেই কৃষিকে অবহেলা করছে। তরুণরা কৃষিকাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে, বিকল্প জীবিকার খোঁজে চলে যাচ্ছে শহরে।
এ পরিবর্তন শুধু অর্থনীতির নয়, সংস্কৃতিরও। হাট-বাজার, মাঝির গান, কৃষকের শ্রম-এসব শুধু গ্রামীণ জীবনের চিত্র নয়; এগুলোই আমাদের লোকসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলোর হারিয়ে যাওয়া মানে আমাদের শেকড়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো।
স্থানীয় এক প্রবীণ কৃষক আফসোস করে বললেন
“আমরা ছোটবেলায় গাছের নিচে হাটে যেতাম, নৌকার হাটে গান শুনতাম। এখনকার ছেলেমেয়েরা এসব দেখেই নাই। ঐতিহ্য হারাইতেছে।
আমরা কি এই ঐতিহ্যগুলো ফিরিয়ে আনতে পারব? নাকি একদিন নতুন প্রজন্ম জানবেই না, বাংলার গ্রাম একসময় কত প্রাণবন্ত ছিল? আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই গ্রামীণ ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে হবে। না হলে একদিন ইতিহাসের পাতায় হয়তো শুধু লেখা থাকবে- কখনো বাংলার গ্রামে গাছতলায় হাট বসত, মাঝি গান গাইত, কৃষক মাঠে ফসল ফলাত।