নাজমুস সাকিব, কলাপাড়া
পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের সোনাতলা নদীর সেতুর পশ্চিম পাশে দীর্ঘ এলাকায় নদীর প্লাবনভূমি ও সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রিংবাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। স্কেভেটর দিয়ে ফ্রি-স্টাইলে নদীর মাটি কেটে বাগান, প্লাবনভূমি এবং শত শত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছপালা সমৃদ্ধ বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে। অথচ বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা ভূমি প্রশাসন-কেউই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মাঝখান দিয়ে গাছ কেটে রিংবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বর্ষাকালে পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি এবং ম্যানগ্রোভ গাছপালা মারা যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনকি ওই এলাকায় বাড়িঘর, পুকুর, বিদ্যুতের লাইন পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাদা (খাল) পর্যন্ত বাঁধ দিয়ে চলাচলের রাস্তা বানানো হয়েছে-যা পুরো পরিবেশ ও প্রতিবেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, রুহুল ফকির নামের এক ব্যক্তি কয়েকশ’ মিটারজুড়ে কোটি টাকার খাসজমি ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখলে নিয়েছেন। তিনি জানান, চিংড়ি শুকানোর সুবিধার্থে রিংবাঁধ দেওয়া হয়েছে এবং বর্ষায় তা কেটে ফেলা হবে বলেও দাবি করেন। পাশাপাশি চার-পাঁচজনের বন্দোবস্ত করা জমির কথাও বলেন তিনি।
এ বিষয়ে পরিবেশ সংগঠক নজরুল ইসলাম বলেন, “এভাবে ফ্রি-স্টাইলে নদী ও বনাঞ্চল ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। যে ভুয়া বন্দোবস্তের মাধ্যমে এই দখল হয়েছে, তা বাতিল করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন-যে এলাকা এখনো জোয়ারে প্লাবিত হয়, সেখানে ১৫–২০ বছর আগে কীভাবে কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেওয়া হলো?
হাজীপুর এলাকার ফরেস্টার কামরুল আহসান জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। দুই ব্যক্তি রিংবাঁধ নির্মাণে জড়িত বলে জানান তিনি।
উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি এবং কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউছার হামিদ বলেন, “নদীতীর কিংবা বনাঞ্চল দখলের সুযোগ নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল ও নদীতীর ভরাটের মাধ্যমে পরিবেশ–প্রতিবেশ ধ্বংসের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা থামাতে জরুরি উদ্যোগ ও কার্যকর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।