জিঞ্জিভাইটিস (মাড়ির প্রাথমিক প্রদাহ) ও পেরিওডন্টাইটিস (মাড়ির জটিল রোগ) শুধুমাত্র মুখগহ্বরের সমস্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য, বিশেষ করে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো প্রমাণ করেছে যে এই রোগগুলো সিস্টেমিক ইনফ্ল্যামেশন (গোটা শরীরে প্রদাহ), রক্তনালির ক্ষতি এবং রক্তে প্রদাহসূচক প্রোটিন (যেমন CRP) বৃদ্ধি পায় যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনার অন্যতম সূচক।
রোগের সংজ্ঞা ও কার্যকারণ:
জিঞ্জিভাইটিস: মাড়ির উপরের স্তরে প্রদাহ, রক্ত পড়া, লালচে ভাব ইত্যাদি।
পেরিওডন্টাইটিস: জিঞ্জিভাইটিস নিয়ন্ত্রণ না করলে তা দাঁতের চারপাশের হাড় ও লিগামেন্টে ছড়িয়ে পড়ে, যা দাঁতের ক্ষয় ও পড়ার কারণ হতে পারে।
ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণসমূহ:
1. দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ (Chronic Inflammation):
মাড়ির প্রদাহ সারা শরীরে প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
এটি Atherosclerosis (রক্তনালিতে চর্বি জমা) ত্বরান্বিত করে।
— রেফারেন্স: BioMed Central Oral Health, 2024
2. ব্যাকটেরিয়ার রক্তে প্রবেশ:
মাড়ির ক্ষতস্থান দিয়ে ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে।
এই ব্যাকটেরিয়া রক্তনালির দেয়ালে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
— রেফারেন্স: Wikipedia – Porphyromonas gingivalis
3. উচ্চ মাত্রায় CRP (C-reactive protein):
পেরিওডন্টাইটিসে শরীরে CRP এর মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকির সূচক।
— রেফারেন্স: Wikipedia – Periodontal disease
4. রক্তনালির অভ্যন্তরীণ ক্ষতি (Endothelial Dysfunction):
প্রদাহের কারণে রক্তনালির প্রাকৃতিক কার্যকারিতা নষ্ট হয়, যা উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তপ্রবাহের ব্যাঘাত ঘটায়।
— রেফারেন্স: BioMed Central Oral Health, 2024
গবেষণালব্ধ তথ্য:
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মতে, মাড়ির রোগ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ২-৩ গুণ বাড়ায়। — Harvard Health Publishing
পেরিওডন্টাইটিসে স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ হয়। — NIH, PMC Article
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনারি আর্টারি ডিজিজে ঝুঁকি ৯% পর্যন্ত বাড়ে। — Journal of the American College of Cardiology (JACC)
সুপারিশ:
নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস করা
বছরে অন্তত একবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া
ধূমপান পরিহার করা
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
উপসংহার:
মাড়ির রোগ কেবল দাঁতের সমস্যা নয়, বরং এটি একটি সিস্টেমিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।