বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আর আইনের দুর্বল প্রয়োগে যে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তাতে এক পুরনো অসুস্থ প্রবণতা নতুন করে ফিরে এসেছে—মব জাস্টিস। গণপিটুনি, জনরোষ বা ন্যায়ের নামে আবেগনির্ভর প্রতিশোধ এখন অনেকের কাছে বিকল্প বিচারব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অথচ এটা ভুলে গেলে চলবে না—মব কোনো সময়েই গ্রহণযোগ্য ছিল না, আজও নয়। বরং ভয়াবহ ব্যাপার হলো, অনেকেই একসময় এই মবের উল্লাসে মেতে উঠেছিল। আর আজ যখন নিজের ঘরে আগুন লেগেছে, তখন মব সংস্কৃতিকে গালাগাল দিচ্ছে। এই দ্বিমুখিতা আমাদের সামাজিক চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
প্রশ্ন হলো, মবের জন্ম কীভাবে? মব কোনো সরকারের সৃষ্টি নয়। এর শিকড় সমাজের ভেতরেই—অসহিষ্ণুতা, আইন না মানার মানসিকতা, বিচারপ্রক্রিয়ায় অনাস্থা এবং আবেগতাড়িত প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই মব জন্ম নেয়।
আমরা অনেক সময় ভুলে যাই, বিচার মানে প্রতিশোধ নয়। বিচার মানে হচ্ছে প্রমাণভিত্তিক সত্য উদঘাটন, ন্যায়ভিত্তিক রায় এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। মব সেখানে ঠিক উল্টো—গুজব, উত্তেজনা আর হিংস্র উল্লাসের মঞ্চ।
আজ যারা কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের কষ্ট অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই কষ্ট যদি অন্যের কষ্টে সহানুভূতি সৃষ্টি না করে, তবে এ সমাজে পরিবর্তন আসবে না। কারণ মব একদিন কারও পক্ষ হলে, আরেকদিন বিপক্ষেও দাঁড়াতে পারে। এমনকি আপনারই প্রিয়জন হতে পারে সেই শিকার।
আমরা যদি সত্যিই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ন্যায়ের সমাজ চাই, তাহলে আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি আইনের পক্ষে, না আবেগের পক্ষে? আমরা কি ন্যায় চাই, না প্রতিশোধ?
সময় এসেছে মবের বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়াবার। দল-মত নির্বিশেষে, এই অসভ্যতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াই হবে একজন সচেতন নাগরিকের আসল পরিচয়।
ন্যায়বিচার সার্বজনীন হওয়া উচিত। ব্যক্তি, দল বা আবেগ অনুযায়ী তার মানদণ্ড বদলালে তা ন্যায়ের নামেই অন্যায় হয়ে ওঠে।
লেখক: শিক্ষার্থী
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ