দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আঁকড়ে ধরে ছিলেন একক আধিপত্য। এ বছরই পদোন্নতি পেয়ে স্বাস্থ্য প্রশাসক বনে যান চিকিৎসক জে এইচ খান লেলিন। দীর্ঘ এত বছরে তার অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষ। তার এসব অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা থেকে মুক্তির পদ খুঁজছেন উপকূলবাসী। তবে অদৃশ্য শক্তির বলে তিনি রয়েছে বহাল তবিয়্যতে।
যোগদানের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথাবার্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। চিকিৎসক লেলীনের খুটির জোর খুজে পাচ্ছেন না কেউ। জনশ্রুতি রয়েছে কলাপাড়া উপজেলার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে তার সখ্যতা আছে। চিকিৎসক লেলীনের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ থাকার পরেও স্বাস্থ্য প্রশাসন নিচ্ছুপ কেন? খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২০১৪ সালে তিনি কলাপাড়া হাসপাতালে যোগদান করেন। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করেন হাসপাতালে।
অভিযোগ রয়েছে, কলাপাড়া উপজেলাতে তার কয়েকটি বে-নামে ক্লিনিক হাসপাতাল রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে এনে তাকে অপসারণের দাবিতে কয়েক দফা মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এতো এতো অনিয়ম দুর্নীতির পরেও তিনি এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়্যতে।
এ নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে উপজেলা জুড়ে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন তার খুটির জোর কোথায়? অভিযোগ রয়েছে তিনি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া রয়েছেন এখনো বহাল তবিয়্যতে। দেখা যায় তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দেয়া একটি পোস্ট দেয়া হয় তাতে লেখা হয় “দে দে মরণ কামড় দে, দেরি করিস না” অস্তিত্বে বাংলাদেশ শেখ হাসিনা।
এই লেখার সাথে ডাক্তার জে এইচ খান লেলিনের ছবি যোগ করে তাকে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে উল্লেখ করে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি বাতিলের দাবি করেছেন কেউ বা বিচার দাবি করেছেন।
অভিযোগ রয়েছেন, তিনি দীর্ঘ এক যুগের ও বেশি কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিগত আ.লীগ সরকারের তৎকালীন নেতাদের যোগসাজশে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠেন। রোগীদের সাথে অসদাচরণ, টেস্ট বানিজ্য, সরকারি জমি বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, অবহেলায় তার হাতে মৃত্যু হয়েছে অনেক রোগী এমন অহরহ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন রকম টেস্ট দিয়ে তার নিজস্ব ক্লিনিক ম্যাক্স এবং কলাপাড়া ক্লিনিকে টেস্ট করাতে বাধ্য করেন রোগীদের। জনশ্রুতি রয়েছেন কলাপাড়াতে তার ব্যাপক সম্পত্তি রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে ২০২১ সালে ডা. লেলিনের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকসহ রুনা (২০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর হয়। মৃত্যু প্রসূতি রুনা কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জসিমের স্ত্রী।
২০২২ সালে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাউবোর সরকারি জায়গার পজিশন বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলাও হয়েছিলো। কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শোভন শাহরিয়ারের আদালত এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পটুয়াখালীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিচার কাজ থেমে যায়।
উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের মোসা. মরিয়ম জাহান নূপুর প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগে ডা. লেলিনের নামে এ মামলা দায়ের করেন।
২০২৩ সালে তার ভুল চিকিৎসায় স্বপন সিকদার নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছিলেন উপজেলা আইনজীবী কল্যাণ সমিতি। এ কর্মসূচিতে স্বপন সিকদারের স্বজন ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
ইতোমধ্যেই তার শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও উপজেলার হেলিপোর্টে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। এতে অংশ নিয়েছেন কলাপাড়া উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা ছাত্র প্রতিনিধি মাশরাফি কামাল শাফি বলেন, রমজানের জন্য আমরা আমাদের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছি লেলিনের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আমরা শুনেছি তিনি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতাদের টাকা পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করে এখানে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা তার অপসারণের জন্য ইতিমধ্যে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় সিভিল সার্জনর বরাব স্মারকলিপি দিয়েছি। ঈদের পরে আমরা আবার নতুন কর্মসূচিতে ফিরবো।
এ বিষয়ে ডাক্তার লেলিন বলেন, এ বিষয়ে ডঃ লেলিন বলেন, যখন যে সরকার আসে তার হয় কাজ করি। তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরও জানান, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছিল। তখন হয়তো পরিকল্পিতভাবে এই পোস্ট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, আমি যোগদানের পূর্বেই ডাঃ লেলীনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। সেটি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে ফরোয়াড করেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে