কলাপাড়া পৌরশহর নিয়ে কিছু ভাবনা ও করনীয় :
=======
ইয়াকুব খান
আন্ধার মানিক নদীটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত স্রোতধারার দক্ষিণ তীরে কলাপাড়া শহরটি অবস্থিত। এক সময়ে নৌ-বন্দর হিসাবে পরিচিত বানিজ্যিক শহরটির ব্যাপক সুখ্যাতি ছিলো। নদীর তীর ঘেঁষে বেড়ে ওঠা শহরটি লম্বালম্বি পূর্ব-পশ্চিমে পাউবোর ওয়াপদার রাস্তা (বেড়িবাঁধ)টি এ-শহরের মূল সড়ক হিসাবে পরিচিত। পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে বেশ কিছু খাল সরাসরি আন্ধার মানিক নদীর সাথে সংযুক্ত ছিল। প্রমত্ত খরস্রোতা যৌবনের আন্ধার মানিক নদীটি সকল কালো আঁধার দখল-দূষণকে হজম করে মৃত প্রায়, তারপরেও দক্ষিণা বিশুদ্ধ নির্মল বায়ু দিয়ে পুরো শহর ও মানুষকে দীর্ঘদিন সতেজ ও আগলে রেখেছে। নদীর তীরের এ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে আবৃত শহরটি হতে পারতো বসবাসের উপযোগী শ্রেষ্ঠ ও দৃষ্টিনন্দন শহর। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন, অসচেতনতা,অদূরদর্শীতা ও অতিলোভ শহরবাসির ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠছে।
পৌরসভা সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত শহরটির পরিচিত ছিলো কুমার পট্টি, কামার পট্টি, নাইয়া পট্টি, কলা পট্টিসহ অসংখ্য পেশাজীবি সমষ্টির নামে।
শহরটি নয় (৯)টি ওয়ার্ডে বিভক্ত হয়ে পরিধি প্রসারিত হয়। পরিতাপের বিষয় পৌরসভার নতুন দুই তলা বিশিষ্ট ভবন তৈরি হয় এতিমখানার জন-মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহারিত মিষ্টি পানির বড় একটি পুকুর ভরাট করে। যে পৌরসভার কাজ প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষা করে নিয়মনীতি বাস্তবায়ন ও দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান শহরকে পরিকল্পিত ভাবে সাজাবে, সে পৌরসভা দাড়িয়ে আছে অবৈধভাবে ভরাট করা পুকুরের উপর।
একটি শহর তৈরির প্রথম ও পূর্বশর্ত নগরবাসিকে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পায়ে হাঁটাপথ( ফুটপাত), যানচলাচলের সড়ক ও পর্যাপ্ত খোলা জায়গা গ্রিন জোন রাখা। কলাপাড়া শহরে রাস্তার অনুপাতে বৈধ-অবৈধ গাড়ির সংখ্যা মারাত্মক বেশি। এখানে ট্রাফিক সিস্টেম সম্পূর্ন অনুপস্থিত ও অকার্যকর।
বিশেষ করে রাস্তায় ঝাকুনি দিয়ে বিকট শব্দে আতংক সৃষ্টি করে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে ইট-বালু ও মালামাল ভর্তি ট্রলি, অগণিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, বাইক। মানহীন দুর্বল রাস্তায় উপর দিয়ে ট্রলির মতো দৈত্য দানব চলাচল করলে রাস্তা লোড না নিতে পেরে সক্ষমতা হারিয়ে ভিতরের হাড্ডি ইট খোয়া বেড়িয়ে কাঁদা ধূলোয় খানাখন্দে ও গর্তে একাকার হয়ে যায়।
মানুষ পরিবহনের ব্যাটারি চালিত অটোর বডির বাহিরেও রশি বেঁধে প্রকাশ্যে মালামাল টানা নিত্যনৈমত্তিক বিষয় হয়ে পড়েছে।
এমনকি অটো ভ্যানে বোঝাইকৃত রডের বান্ডিলের বিপদজনক মাথার অংশ সম্মুখ দিকে রেখে ব্যস্ততম সড়ক দিয়ে বীরদর্পে চালিয়ে যায়,তা ধারালো ছুরির মাথার খোলা অংশের চেয়েও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ন। বাঁশ বোঝাইকৃত ঠ্যালাভ্যান,যান্ত্রিক ভ্যান খোলামেলা সামনেপিছনে নিয়ন্ত্রণহীন ঝুলানো সড়কের উপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চলছে,যেন নিজস্ব বেড রুমের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে ‘ডোন্ট কেয়ার’। দেখ ভাল করার কেউ নেই,নিয়মনীতি তোয়াক্কা নেই, কোনো শাস্তির ভয় নেই, প্রকাশ্যে হাজারো চোখের সামনে চলছে তো চলছেই। মাঝেমধ্যে বর্তমান পৌর প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেব টোটকা কিছু সিস্টেম কার্যকর করতে সভা ডাকে অথবা মাইকিং করে জানিয়ে দেয়; হাজারো অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের মাঝে এ হাঁকডাক হারিয়ে যায়। পৌরসভা পরিচালনায় দক্ষ অভিজ্ঞ লোকবল প্রশাসকের পাশাপাশি টেকনিক্যাল ম্যানপাওয়ার প্রয়োজন।
চালকদের কোনো প্রশিক্ষন নেই,তেমনি যানবাহনের কোনো বিআরটিএর অনুমোদন বৈধ কাগজপত্র কিছু নেই, এমনকি চালকদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চা সংখ্যাও কম নয়।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এ যানবাহনকে রাস্তায় চলাচলের ব্যবস্থা করে অটোরিকশা,রিক্সা প্রতি টোকেন দিয়ে টাকা সংগ্রহ করা।
রাস্তার অনুপাতের সাথে এ গাড়ির কোনো পরিসংখ্যান নেই, পৌরকর্তৃপক্ষকে টাকা দিলে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নসহ অন্য উপজেলার যানবাহন পৌরসভা শহরে ঢুকতে ও বেড়োতে পারবে।
দুর্ভাগ্য আমর বাসা-বাড়ি বানানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে রাস্তা অথবা সিড়ির কথা মাথায় রাখিনা। অনেক ক্ষেত্রে বিল্ডিং বানানোর পড়ে সিড়ির কথা ভাবি।
বাজারে মধ্যে যতটুকু রাস্তা রয়েছে তার উভয় পাশে দোকানীর মালামাল রেখে পায়ে চলাচলের পথকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে মূল রাস্তায় হাঁটতে সাধারন পথচারী বাধ্য হয়, মূল রাস্তায় তো ধারন ক্ষমতা অতিরিক্ত যানবাহনে যানজট লেগেই থাকে, যানজটের দুর্ভোগ দেখে মনে হয় আমরা রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।
পৌর শহরের কাঁচা তরকারি বাজার রাস্তা দখল করে বসে, মাছ বাজারের পাকা চালা থেকে বেরিয়ে চলাচলের মূল রাস্তার উপরে বসে মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। একশ্রেণী ইজারাদার রাস্তার উপরে বাজার বসাতে উৎসাহিত করে।
পৌর শহরের মধ্যকার খালগুলো দখল দূষণে সংকটে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নিত্যদিনের গৃহস্থালি, হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পয়োঃনিষ্কাশন বলতে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ উপহার নদী ও খালের সাথে সংযোগকে বুঝি।
পুরোপুরি বিল্ডিং কোড অনুসরণ ও পৌরসভার ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনে ভবন নির্মাণ করা।
(অবশ্য বর্তমান পৌরসভার অনুমোদন দেয়ার আগেই মনের মাধুরি মিশিয়ে অধিকাংশ বিল্ডিং রাজমিস্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী নির্মাণ করে, ভবন নির্মাণের পরে প্রয়োজন হলে ভবন অনুমতি পত্র সংগ্রহ করে, যার সাথে পৌর ভবন নীতিমালা নকশার কোনো সম্পর্ক নেই)।
জমির মালিকানা দেখে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রে সীমানা চিহ্নিত করে লে-আউট প্ল্যানে ভবনের কোন দিকে কতটুকু ছাড় দিতে হবে পাশের বিল্ডিং এর মধ্যের দূরত্ব ্ অনুমোদিত নকশায় সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে এবং অনুমোদিত নকশা ডিজাইন মতো ভবন নির্মাণ করতে হবে।
বহুতল ভবন নির্মাণ আবাসিক – বানিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রাউন্ড ফ্লোরে গাড়ি পার্কিং-এ ব্যবস্থাসহ রাস্তার সম্মুখের অনুমোদিত নকশার নিয়মানুযায়ী জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে।
পৌরসভাকে দীর্ঘ যানজট মুক্ত করতে ও চলাচলের জন্য জনস্বার্থে প্রয়োজনে পৌর কর্তৃপক্ষ যেকোনো ভবন ভেঙ্গে সরিয়ে নতুন রাস্তার তৈরি এবং সরু রাস্তাকে ফায়ার সার্ভিসের ও অ্যাম্বুলেসের গাড়ি চলাচলের ন্যায় প্রশস্থ করতে হবে। বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে হবে।