কলাপাড়ায় জন্ম আমার, বেড়ে উঠাও এই মাটিতে। নদী, খাল, ঝাউবন, সমুদ্র—সব মিলিয়ে যে প্রকৃতির সঙ্গে আমরা বড় হয়েছি, আজ সেই প্রকৃতিই ধীরে ধীরে যেন আমাদের চোখের সামনে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
এক সময় আন্ধারমানিক নদীর পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে নদীর ছোটাছুটি দেখতাম। এখন সেই নদী পাড় গিলে ফেলছে ঘর, জমি, এমনকি শ্মশান—যা মানুষের অস্তিত্বের শেষ চিহ্ন। আমরা উন্নয়ন চাই, চাই পর্যটনের প্রসার, চাই আধুনিকতা। কিন্তু সেই উন্নয়নের নামে যখন ঝাউবন কেটে রিসোর্ট গড়ে, যখন নদীর বুকে বালুর হাট বসে, তখন সেই উন্নয়ন আমার কাছে আর উন্নয়ন মনে হয় না। মনে হয়, এটি প্রকৃতিকে পুঁজি করে লোভের জাহান্নামে নামার আরেক নাম। পরিবেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে—এটি ধ্বংস হয় ধীরে ধীরে, আর বুঝে উঠতে উঠতেই সব শেষ হয়ে যায়।
আজ কলাপাড়ার সবচেয়ে বড় সংকট আমার মতে, সেটা একটাই—সচেতনতার অভাব আর সমন্বয়ের দুর্বলতা। পর্যটন ব্যবসায়ী, ট্রলার মালিক, প্রশাসন, এমনকি আমরা সাংবাদিকরাও অনেক সময় নিজেদের দায়িত্বটা ভুলে যাই। একটু বেশী লাভের আশায় আমরা কখনো নদীর তীর দখল করি, আবার কখনো প্লাস্টিক ছড়িয়ে দেই সৈকতে। এত কথা বলার পরেও যদি সমাধানের দিকে তাকাই, আমি হতাশ না। এখনো সময় আছে।
পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া নির্মাণ কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। নদীভাঙন ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প দরকার, সেটা যেন প্রকল্পেই আটকে না থাকে। শহর ও পর্যটন এলাকায় কঠোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে। এবং importantly, তরুণদের পরিবেশ আন্দোলনে জড়াতে হবে। আমরা যারা সাংবাদিকতা করি, তারা জানি—একটি ফিচার বদলে দিতে পারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। তাই এই লেখাটা শুধু তথ্য নয়, একটি আবেদন—আসুন, কলাপাড়াকে আমরা কেবল পর্যটনের শহর নয়, পরিবেশ সচেতন এক মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলি। আজকের নীরব প্রকৃতি একদিন হয়তো আমাদের কাছে বিচার চাইবে। সেদিন যেন কলমের সামনে আমরা বিব্রত না হই। শেষ কথায় বলি পরিবেশ রক্ষা এখন শুধু কোনো দয়া নয়, এটা অস্তিত্বের লড়াই।