নাজমুস সাকিব, কলাপাড়া
ঢাকাগামী ইউনিক পরিবহনের একটি বাসে ধূমপান ও বেপরোয়া গতির ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পটুয়াখালীর আমতলী থেকে ছেড়ে আসা বাসটিতে এক পর্যায়ে চালক বলেই বসেন, অধিকাংশ চালকই চলন্ত বাসে ধূমপান করে থাকে, আপনি তা জানেন না।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার (১৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে। কুয়াকাটা থেকে ছেড়ে আসা ইউনিক পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৭১৭) বাসটি আমতলী ছাড়ার পর চালক চলন্ত অবস্থায় সিগারেট জ্বালান। এ সময় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ে’র নির্বাহী পরিচালক মো: শাহিন প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, চলন্ত গাড়িতে ধূমপান আইনত নিষিদ্ধ এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে তার এই বক্তব্যে চালক পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অধিকাংশ চালকই তো ধূমপান করে, আপনি জানেন না ?এরপর চালক, সুপারভাইজার ও হেল্পারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
বিরতির পর বাসটি চলতে শুরু করলে চালক গতি ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটারে সীমিত রাখেন। এতে অন্যান্য যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং গতি বাড়াতে বলেন। কেউ কেউ মজা করে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ ধরলে জরিমানা আমরাই দেবো।তবে চালক জানান, আমি আইন ভেঙে চালাবো না, কারণ শাহিন স্যার আমাকে সতর্ক করেছেন।
ঢাকাগামী যাত্রী মাহমুদুল হাসান বলেন, এ রুটে চালকদের অসচেতনতা ও অতিরিক্ত গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ধূমপানের বিষয়টিও মেনে নেওয়ার মতো না। এগুলো আইন করে কঠোরভাবে বন্ধ করা দরকার।
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) এর শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, এ ধরণের ঘটনা কেবল যাত্রীদের ঝুঁকিতে ফেলে না, বরং দেশের আইনশৃঙ্খলা ও সচেতনতার প্রতিও প্রশ্ন তোলে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার মনে হয়, গণপরিবহনে আইন অমান্যের ঘটনা স্বাভাবিকভাবে নেওয়া আমাদের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলছে। যারা প্রতিবাদ করেন, তাদেরকে সম্মান জানানো উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসচালক বলেন, এটা তেমন কিছু না, এতকিছু হবে ভাবিনি। তবে শাহিন স্যারের পরামর্শে গতি কমিয়েছি। পাথওয়ে’র নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন বলেন, আমরা কবে সচেতন হবো ? প্রতিদিন এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে, অথচ যাত্রীরাই চালকদের গতি বাড়াতে উৎসাহ দেয়।” তিনি আরও জানান, আমি একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। সিগারেটের ধোঁয়ায় অসুবিধা হওয়ায় চালককে নিষেধ করেছিলাম।
এ বিষয়ে বিআরটিএ বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, চলন্ত গণপরিবহনে ধূমপান আইনত দণ্ডনীয়। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বলেন, যানবাহনে শৃঙ্খলা না থাকলে শুধু দুর্ঘটনাই নয়, জাতীয় নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে পড়ে। গণপরিবহনে ধূমপান শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই নয়, এটি আইন ভাঙার প্রকাশ্য দৃষ্টান্ত। চালক ও সহকারীদের মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে তুলতে না পারলে, যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।