1. khairunnahar311984@gmail.com : কলাপাড়া পোস্ট :
  2. necharlenovo@gmail.com : Nechar Uddin : Nechar Uddin
  3. mdabdullahalnoman819@gmail.com : MD. ABDULLAH AL NOMAN : MD. ABDULLAH AL NOMAN
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র: উন্নয়নের ছায়ায় স্বাস্থ্য হুমকি
শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র: উন্নয়নের ছায়ায় স্বাস্থ্য হুমকি

নাজমুস সাকিব
  • প্রকাশিত সময়ঃ সোমবার, ২ জুন, ২০২৫
  • ১৮৫ জন দেখেছেন

আমাদের কলাপাড়ার বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে এক ‘উন্নয়নের আইকন’—পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। দেশের প্রথম বড় ধরনের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এটি। রাষ্ট্রীয়ভাবে একে উন্নয়নের মাইলফলক বলা হলেও, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে আশেপাশের মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে।
কয়লার ধোঁয়া আর শিশুর শ্বাস

প্রতিদিন হাজার হাজার টন কয়লা পোড়ানো হচ্ছে এই কেন্দ্রে। ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, ও সূক্ষ্ম ধুলিকণা (PM2.5)। এই উপাদানগুলো মানুষের ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসকষ্ট, কাশি, চোখ জ্বালা আর শিশুদের নিউমোনিয়া পর্যন্ত ঘটাচ্ছে।
আমার দেখা স্থানীয় অনেক শিশু নিয়মিত ক্লিনিকে যাচ্ছে। বয়স্কদের মধ্যে হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ ও ঘুমহীনতার সমস্যা বেড়েছে। এটাই কি সেই উন্নয়ন—যার বিনিময়ে আমাদের ফুসফুস বিক্রি করে দিতে হবে?

নদীতে বিষ, পাতে মাছ নেই এই প্রকল্পের তাপযুক্ত বর্জ্য পানি রামনাবাদ নদীতে ফেলা হচ্ছে—এমন অভিযোগ বেশ পুরোনো। ফলে নদীর পানির তাপমাত্রা ও রাসায়নিক গুণাগুণ বদলে গিয়ে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে।
জেলেরা বলছেন—ইলিশ, কোরাল, রুপচাঁদা এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, নদীর পাড়ে ধানচাষেও ফলন কমে যাচ্ছে, মাটি শক্ত হয়ে যাচ্ছে।
ধুলাবালি ও নীরব দূষণ কয়লা পরিবহন চলছে খোলা ট্রাকে ও জাহাজে। ফলে আশেপাশের গ্রামগুলোতে কালো ধুলার আস্তরণ পড়ছে গাছপালা, উঠোন, এমনকি পানির পাত্রেও।
লালুয়া, আমতলী, বাউফল—এসব জায়গার অনেকেই প্রতিদিন চোখ চুলকানো, ত্বকে ফুসকুড়ি এবং মুখে ঘা নিয়ে হেলথ ক্যাম্পে যাচ্ছে। তবু এই দূষণ যেন চোখে পড়ার মতো কিছু নয়—কারণ এটা গ্যাসের মতো নীরব।
স্বাস্থ্যসেবা নেই, গবেষণা নেই সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো—এই বিশাল প্রকল্পের আশপাশে কোনো মানসম্মত হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নেই। স্থানীয় ক্লিনিকগুলো ওষুধ ও ডাক্তার সংকটে। অথচ এত বড় একটা প্রকল্পের আগে-পরে সরকারি বা স্বাধীন কোনো স্বাস্থ্য বা পরিবেশ প্রভাব জরিপ হয়নি। অথবা হলেও, তা জনসমক্ষে আসেনি।

এই পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী?
কয়লা পোড়ানোয় আধুনিক প্রযুক্তি (FGD, ESP) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা। নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ এবং পানির মান নিয়মিত পর্যালোচনা। কয়লা পরিবহনে বন্ধ ট্রাক, ওয়াটার স্প্রে ও ধুলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করা। স্বচ্ছ ও জনগণের অংশগ্রহণে পরিবেশ নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

উন্নয়ন হোক, তবে তা যেন মানুষকে বিপদে না ফেলে। একটা প্রকল্প যদি দশ বছরের মধ্যে হাজারো মানুষকে অসুস্থ করে ফেলে, তাহলে সেটি আর উন্নয়ন নয়—নীরব ধ্বংস।
আজ কলাপাড়ার আকাশে বিদ্যুতের আলো আছে, কিন্তু বাতাসে আছে বিষ। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা যদি এখনই কথা না বলি, তবে ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

লেখকঃ নাজমুস সাকিব

পরিবেশকর্মী, শিক্ষার্থী যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ (ইউডা)

আপনার সোসাল একাউন্টে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
Developed by ITNexBD