প্রকৃতি ও প্রাণীজগৎ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক সাম্রাজ্যের এবং মানবসভ্যতার ভারসাম্য সুরক্ষায় জগতের প্রতিটি প্রজাতি পৃথকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিটি জীবই কোনো না কোনোভাবে পরিবেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষ কেবল অন্যান্য প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ হচ্ছে না; তাদের কর্মকাণ্ড যদি এ পৃথিবীতেই চলতে থাকে, তাহলে মানুষ প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির বিলুপ্তির দিকেই এগিয়ে যাব।
এই পৃথিবীতে বসবাসরত কোটি কোটি প্রাণীকেই জীববৈচিত্র্য বলে। বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে জীববৈচিত্র্য হলো উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবসহ পৃথিবীর গোটা জীবসম্ভার, তাদের অন্তর্গত জিন ও সেগুলোর সমন্বয়ে গঠিত বাস্তুতন্ত্র। অতি শুষ্ক মরুভূমি থেকে অরণ্য পর্যন্ত, বরফে আবৃত কঠিন পর্বত থেকে সাগরের গভীরে বিস্তৃত বিভিন্ন প্রজাতির জীবজগতের রং, আকৃতি, আকার ইত্যাদির বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও তারা প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট না করে জীবন ধারণ করে আসছে।
জীববৈজ্ঞানিকদের মতে, জৈববৈচিত্র্য হলো জল, স্থল—সব পরিবেশে থাকা সকল ধরনের জীব ও উদ্ভিদের বিচিত্রতা। পৃথিবীর ১২ বিলিয়ন প্রাণীর এক ভাগ অংশেই ৪৯ মিলিয়ন প্রজাতির বিভিন্ন জীবজন্তু ও উদ্ভিদের বসবাস।
জীববৈচিত্র্য বিবেচনা করা হয় তিনটি পর্যায়ে:
১. বংশানুক্রমিক বৈচিত্র্য
২. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য
৩. বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্য
জীববৈচিত্র্য প্রাণীর বিলুপ্তি ঠেকাতে সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। ১৯৯২ সালের জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের চুক্তিতে দেড় শতাধিক দেশ স্বাক্ষর করে, যার মধ্যে বাংলাদেশও অন্যতম।
বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্যে মোট প্রজাতির সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধপত্র প্রভৃতির জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি থেকেই মানুষ পায় খাদ্য, ওষুধ, কাঠ, কাগজ, রাবার, তন্তু, মধু, চামড়া, দুধ, মাছ, মাংসসহ বহু কিছু।
পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ, বৃষ্টিপাত ঘটানো এবং পরিবেশকে শীতল রাখার ক্ষেত্রে উদ্ভিদের ভূমিকা অপরিহার্য। অথচ এসবের গুরুত্ব উপেক্ষা করে ছোট মাছ ধরা, পাখি নিধন, বন উজাড়, নদী-নালা ভরাট ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।
জলাভূমি—যেমন: নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর-ডোবা—পরিবেশ সুরক্ষায় ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবু এসব ভরাটের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।
‘প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০’ ও ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০’ অনুযায়ী এগুলো সম্পূর্ণ বেআইনি হলেও বাস্তবে আইন প্রয়োগ নেই।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনও হুমকির মুখে। তেল ট্যাংকার ডুবে যাওয়া, শিল্প স্থাপন, চোরাশিকার—এসবের কারণে এর জীববৈচিত্র্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। অথচ এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে নয়, বরং বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের জন্য এক অতুলনীয় সম্পদ।
পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে সকল বিনিয়োগ ও নীতিনির্ধারণে দেখতে হবে, তা ভবিষ্যতের জন্য কতটা টেকসই। এর জন্য প্রয়োজন:
আমরা যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিই, তবে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে, এবং এর ফলে মানবজাতির টিকে থাকাই হয়ে পড়বে চ্যালেঞ্জিং।
লেখক: নাজমুস সাকিব
শিক্ষার্থী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা)