নাজমুস সাকিব
৫ জুন—বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জাতিসংঘ ১৯৭২ সালে এই দিনটি ঘোষণা করেছিল পৃথিবীজুড়ে পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে। প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উদযাপন করা হয় এই দিনটি। তবে শুধুই একদিনের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি হওয়া উচিত আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ—পরিবেশ সচেতন জীবনের প্রতিশ্রুতি।
আজকের পৃথিবী এক গভীর সংকটে। জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, বায়ু ও জলদূষণ, প্লাস্টিকের মারাত্মক প্রভাব এবং জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয়ের ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বরফ গলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ এখন নিয়মিত শিরোনাম। নদ-নদীগুলো দখল ও দূষণে প্রায় নিঃশেষ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বৃক্ষনিধন, প্লাস্টিক বর্জ্যের পাহাড়—সব মিলিয়ে বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে। এ অবস্থায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস আমাদের ঘুম ভাঙানোর একটি উপলক্ষ।
এই দিনে সরকার, বিভিন্ন সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশবাদী সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। হয় আলোচনা সভা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, র্যালি, সচেতনতামূলক প্রচার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো কতোটা টেকসই প্রভাব ফেলছে? পরিবর্তন আনতে হলে উদ্যোগ আসতে হবে ব্যক্তির মন থেকে।
আমাদের করণীয় কী? প্রথমত, আমাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কিছু সহজ অভ্যাসই পরিবেশ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন—
একটি গাছ লাগানো, অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ না খরচ করা, প্লাস্টিক ব্যবহার এড়িয়ে চলা, হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহার, পানির অপচয় না করা—এসব ছোট ছোট অভ্যাস থেকেই গড়ে উঠবে বৃহৎ পরিবর্তন।
দ্বিতীয়ত, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। স্কুলে পাঠ্যক্রমে পরিবেশ শিক্ষা আরও জোরদার করা উচিত। শিশুরা জানুক—গাছ মানে জীবন, নদী মানে অস্তিত্ব।
তৃতীয়ত, সরকার ও প্রশাসনের উচিত পরিবেশ বিষয়ক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। শিল্পবর্জ্য, নদী দখল, প্লাস্টিক দূষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
পরিবেশ কোনো একক ব্যক্তির দায় নয়—এটা আমাদের সবার যৌথ দায়িত্ব।
এই পৃথিবী আমাদের কাছে প্রাপ্তি যেমন, তেমনি এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি দায়িত্বও বটে। এই দায়িত্ব পালনে আমাদের কেউই যেন পেছনে না থাকি।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস তাই শুধুই একটি দিন নয়, এটি আমাদের জন্য একটি সুযোগ—নিজেকে প্রশ্ন করার, আমরা কতটা দায়িত্ব পালন করছি?
পৃথিবীকে কি আমরা বসবাসযোগ্য করে রাখছি?
আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা করি—পরিবেশ রক্ষার এ লড়াইয়ে প্রতিদিনই হবো অংশীদার। গড়ি একটি সবুজ, স্বাস্থ্যবান ও টেকসই পৃথিবী।
লেখকঃ পরিবেশকর্মী ও শিক্ষার্থী
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ