বিশ্বজুড়ে আলোচিত ডিজিটাল মুদ্রা Bitcoin, যার বাজারমূল্য এখন ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে—এর পেছনে থাকা রহস্যময় ব্যক্তি সাতোশি নাকামোটা এখন বিশ্বের ১২তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
তবে বিস্ময়কর বিষয় হলো, কেউই জানে না এই মানুষটি আসলে কে!
ফোর্বস ও ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, সাতোশি নাকামোটার মালিকানায় রয়েছে প্রায় ১১ লক্ষের বেশি বিটকয়েন, যার বর্তমান মূল্য ৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েও তিনি রয়েছেন পর্দার আড়ালে—নাম, পরিচয়, জাতীয়তা—সবই আজও রহস্য।
বিশ্ব যখন ধনী ব্যবসায়ীদের জীবনের প্রতিটি দিক জানে, তখন বিটকয়েনের জনক সাতোশি একটি ছায়া চরিত্রের মতোই রয়ে গেছেন। ২০০৮ সালে “Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System” নামের একটি শ্বেতপত্র (Whitepaper) ইমেইলের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
এর পর থেকে বিভিন্ন ফোরামে কিছু বার্তা দেওয়া ছাড়া সাতোশি কখনো প্রকাশ্যে আসেননি।
বিভিন্ন গবেষক ও সাংবাদিকরা দাবি করেছেন, সাতোশি হয়তো একজন ব্যক্তি নন, বরং একটি গোটা দল বা প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ আবার সন্দেহ করেন, এর পেছনে রয়েছে এনএসএ, সিআইএ বা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার মস্তিষ্ক।
তবে প্রশ্ন থাকে—কেন সাতোশি নাকামোটা নিজের পরিচয় গোপন রাখলেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তির জন্মদাতা হিসেবে তিনি যদি সামনে আসতেন, তাহলে হয়তো সরকারের নজরে পড়ে যেতেন, বিটকয়েনের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়ত।
তাছাড়া, বিটকয়েনের দর্শনই হলো বিকেন্দ্রীকরণ (decentralization)—একক কোনো নিয়ন্ত্রকের উপস্থিতি না থাকা। সাতোশি হয়তো চেয়েছেন, তাঁর অস্তিত্বও এই আদর্শের সঙ্গে মিল রেখে বিলীন থাকুক।
সাতোশি নাকামোটার ওয়ালেট এখনো নিষ্ক্রিয়, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা আতঙ্কে যে, যদি তিনি একদিন হঠাৎ তার সব বিটকয়েন বিক্রি করেন, তাহলে বিশ্ববাজারে ভয়াবহ ধস নামতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত তিনি নিঃশব্দ, অপ্রকাশিত, অথচ অনস্বীকার্যভাবে প্রভাবশালী।
একদিকে যখন প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে মানুষের গোপনীয়তা হারিয়ে যাচ্ছে, তখন বিশ্বের ১২তম ধনী মানুষটি থেকেছেন পুরোপুরি অজ্ঞাতনামা—এ যেন আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় রহস্যের একটি।