নাজমুস সাকিব,
এক সময়ের শান্ত, নিরিবিলি জনপদ কলাপাড়া আজ আর সেই আগের মতো নেই। পৃথিবীর অনেক শহরের মতো এখানেও ঘনিয়ে আসছে অপরাধের ছায়া। ধর্ষণ, খুন, ছিনতাই- যেন এখন আর চমকে ওঠার খবর নয়, বরং বাস্তব জীবনের একটি অভ্যস্ত অংশ হয়ে উঠছে।
মানুষ আজ আর নিরাপদ বোধ করে না, বিশেষ করে মেয়েরা। কিছুদিন আগেও কলাপাড়ার টিয়াখালী এলাকায় এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করলেও বিচার কি আদৌ হয়েছে? ভুক্তভোগীর পরিবার এখনও আতঙ্কে দিন কাটায়। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অপরাধ যেন উৎসাহিতই হচ্ছে।
শুধু ধর্ষণ নয়, খুনও এখন যেন কলাপাড়ার অজানা শব্দ নয়। টিয়াখালী ট্যান্ডোলের ঘোজা নামে পরিচিত জায়গায় যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে এবং একই দিনে কুয়াকাটায় মরদেহ উদ্ধার করেছে মহিপুর থানা পুলিশ।
রাজনৈতিক কোন্দল এসব যেন শহরের বাস্তব রূপ হয়ে উঠেছে। কোনো ঘটনায় মামলা হলেও, অনেকক্ষেত্রে তদন্তে গড়িমসি, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, অথবা রাজনৈতিক প্রভাবে বিচার আটকে যায়। মানুষ হতাশ, কারণ তারা দেখে অপরাধী হাঁটে বুক উঁচিয়ে, আর ভুক্তভোগী খোঁজে ন্যায়ের সন্ধান।
ছিনতাইয়ের চিত্রও ভয়াবহ। কলাপাড়া রহমাতপুর, বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় রোড, চিংগুড়িয়া এলাকায় রাতে বাড়ে আতঙ্ক। মহিলাদের ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া, পথচারীর মোবাইল কেড়ে নেওয়া, এমনকি চলন্ত মোটরসাইকেল থামিয়ে ছিনতাই-সবই ঘটছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, আমরা চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসে না, আর পুলিশ আসে ঘটনার পরদিন।
তাহলে প্রশ্ন আসে- আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কি আছে শুধু চেকপোস্ট বসানোর জন্য? নাকি তাদেরও হাত বাঁধা রাজনৈতিক নির্দেশে?
এই অবস্থায় শুধু সরকারের দিকেই তাকিয়ে থাকলে চলবে না। কলাপাড়ার নাগরিক সমাজ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে।
সচেতন নাগরিকদের উচিত অপরাধবিরোধী সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা। স্কুলে করতে হবে নিরাপত্তাবিষয়ক আলোচনা, গড়তে হবে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ। অন্যথায়, আমরা হয়তো আবারও শুনব আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে পাওয়া গেল আরেকটি মরদেহ।
নাজমুস সাকিব
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা)