নোয়াখালী থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ ও দুঃসাহসিক অপহরণের ঘটনার চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। ভাগ্যের জোরে প্রাণে বেঁচে ফিরেছে দুই কিশোরী, কিন্তু বাকি তিনজন এখনো নিখোঁজ।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, নোয়াখালীর একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও তার বান্ধবী প্রাইভেট শেষে ক্লাসে ব্যাগ রেখে সামান্য খাবার কিনতে বের হয়। স্কুল গেটের সামনে এক রিকশাচালক তাদের কাছে এসে একটি কৌশলী গল্প বলে — যে তার ছোট ভাই (অপহৃতার) এক্সিডেন্ট করেছে এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
অপহরণকারীর কথার ফাঁদে পড়ে মেয়েটি তার বান্ধবীকে নিয়ে ফিরে ক্লাস থেকে ব্যাগ নিয়ে আসে এবং রিকশায় ওঠে। কিছুদূর যাওয়ার পর রিকশাচালক ‘রিকশা নষ্ট হয়েছে’ বলে থামে ও চারপাশে স্প্রে করে দুজনকে অচেতন করে ফেলে। এরপর কীভাবে তারা ঢাকার সায়েদাবাদ পৌঁছায়, সে সম্পর্কে তাদের কিছুই মনে নেই।
দুপুরের দিকে মেয়েটির জ্ঞান ফেরে। চোখ খুলে দেখে একটি বড় গাড়ির ভেতর, যেখানে সে এবং তার বান্ধবী ছাড়াও আরও ৩ জন ছোট মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। গাড়ির চালক তখন বাইরে চলে যায়। ভয়, দুশ্চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণে মেয়েটি বান্ধবীকে জাগায় এবং অনেক চেষ্টায় তারা দরজা খুলে গাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
দেড় কিলোমিটার মতো হেঁটে সায়েদাবাদ এলাকায় পৌঁছে ফোন চাইলেও অনেকেই ফোন দেয়নি। পরে সিএনজি করে তারা যাত্রাবাড়ি পৌঁছে পরিচিত একজনের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। ভাগ্যক্রমে মেয়েটি আগেই সেই এলাকা চিনত এবং পথ চিনে নিজে বাসায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
❝আমার ভাগ্নি অনেক ভয় পেয়ে গেছে। বারবার নিজেকে দোষ দিচ্ছে কেন সে পুলিশ ডাকেনি বা মানুষজনকে সাহায্য চায়নি। কিন্তু আমরা জানি এমন আতঙ্কে অনেক সচেতন মানুষও অসহায় হয়ে পড়ে। আল্লাহর অশেষ রহমতে সে ও তার বান্ধবী বেঁচে ফিরে এসেছে।❞
— জানান অপহৃত শিক্ষার্থীর খালা।
তবে সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, সেই গাড়িতে থাকা আরও তিন শিশু-কিশোরী এখনও নিখোঁজ। তারা কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে — কিছুই জানা যাচ্ছে না।
এই ঘটনায় অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পুলিশের প্রতি আহ্বান, দ্রুত অপহরণকারীদের খুঁজে বের করে বাকি শিশুদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে — সন্তানদের জানাতে হবে অপরিচিত কেউ কিছু বললে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।
স্কুল প্রশাসনের উচিত স্কুল গেট ও আশপাশে পর্যাপ্ত নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এই ঘটনা শুধুই একটি গল্প নয়, এটি আমাদের সমাজের জন্য সতর্কবার্তা। এখনই সচেতন না হলে, পরের শিকার হতে পারে আমাদের সন্তান।