নাজমুস সাকিব, কলাপাড়া:
খাল-নদী বেষ্টিত উপকূলীয় জনপদ কলাপাড়া উপজেলার খালগুলো এখন অস্তিত্ব সংকটে। এক সময় কৃষি ও নিত্যব্যবহারের একমাত্র ভরসা ছিল এসব খাল। কিন্তু বর্তমানে দখল, দূষণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে মিঠা পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
রবিবার সকালে কলাপাড়ায় ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলা হয়।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের আঞ্চলিক সমন্বয়ক মেজবাহ উদ্দিন মান্নু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন কলাপাড়ার সংগঠক নজরুল ইসলাম এবং আমরা কলাপাড়াবাসী সংগঠনের সভাপতি নাজমুস সাকিব।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, খাল-নদী নির্ভর এই জনপদের প্রধান পেশা কৃষি ও মৎস্য আহরণ। কিন্তু বর্তমানে শতাধিক খাল ভরাট ও দখলের কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেন, সরকারি ভূমি অফিসের অব্যবস্থাপনা ও তহশিলদারদের অনীহার কারণে প্রভাবশালী মহল খাল দখল করে পুকুর ও বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে। অনেক খাল আবার মাছ চাষের নামে লিজ দিয়ে দখলদারদের হাতে চলে গেছে।
বক্তারা আরও জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল পুনঃখননে ব্যর্থ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় খাল খনন করায় সরকারের অর্থ ব্যয় হলেও কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, কলাপাড়া পৌর শহরের বাদুরতলী খাল ও কুয়াকাটা পৌর এলাকার লতাচাপলী মৌজার খাল দুটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। নবোদয় হাউজিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান সরকারি খাল ভরাট করে দখলে নিলেও প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে।
কলাপাড়ার সকল খালের ইউনিয়নভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন।
এস.এ. নকশা অনুসারে খালের সীমানা চিহ্নিতকরণ।
খাল দখল ও দূষণ রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ।
কৃষকদের হাতে খালের নিয়ন্ত্রণ ন্যস্ত করা।
খালকে কৃষিজমি দেখিয়ে দেওয়া বন্দোবস্ত বাতিল।
মাছ চাষের নামে খাল লিজ না দেওয়া।
লোনা পানির প্রবেশ ঠেকাতে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ।সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, খাল দখল ও ভরাটের কারণে শুধু কৃষিই নয়, কলাপাড়ার পরিবেশ ও জনজীবনও হুমকির মুখে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে এ অঞ্চলের জলপ্রবাহ একদিন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নেছার উদ্দিন টিপু, সাধারণ সম্পাদক অমল মুখার্জি, সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির, এবং কলাপাড়ার বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ।