আবদুল্লাহ আল নোমান
প্রতিবন্ধকতা? সে তো শরীরের বাঁধা। কিন্তু মন যদি জেদে জ্বলে, তবে কোনো বাধাই আর বাধা থাকে না। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ছেলে গোলাম রব্বানি যেন সেই কথারই জীবন্ত প্রমাণ।
জন্ম থেকেই শরীরের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল রব্বাবির। হাঁটতে পারেন না স্বাভাবিকভাবে, দৌড়ানো তো দূরের কথা। তবে স্বপ্ন দেখতে কখনোই বাঁধা পড়েননি। ছোটবেলা থেকেই চোখে ছিল নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর তীব্র বাসনা। তিন ভাইবোনের সংসারে বাবা ছিলেন একমাত্র ভরসা—একজন দরিদ্র দর্জি, যার সেলাই মেশিনের শব্দে চলত সংসারের ঘড়ি।
রব্বানির বড় বোনও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। প্রতিদিন জীবনের কঠিন বাস্তবতা চোখে দেখেছেন তিনি। স্কুলে যাওয়া ছিল অনিয়মিত, কখনো বই কিনতে পারেননি, কখনো ফিস দিতে না পেরে পিছিয়ে পড়েছেন। তবু থেমে থাকেননি।
একদিন বাবার কষ্টের টাকায় কেনা একটি পুরোনো ল্যাপটপ হাতে পেলেন রব্বাবি। সেই ল্যাপটপ হয়ে উঠল তার পৃথিবী বদলের সিঁড়ি। ইন্টারনেটের জানালা খুলে সে যখন নিজের ভেতরের আলো আবিষ্কার করছিল, তখনই ধীরে ধীরে জন্ম নিল এক নতুন রব্বাবি।
২০২১ থেকে ২০২৩—এই তিন বছর ধরে কোডম্যানবিডি’র অনলাইন কোর্সে অংশ নিয়ে নিজেকে গড়ে তুললেন। শিখলেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়ার্ডপ্রেস—আরও কত কী! ২০২৩ সালেই শুরু করলেন ফ্রিল্যান্সিং।
মাত্র দুই বছরের মাথায় Fiverr-এ অর্জন করলেন Level-2 সেলার পদ। ৩০০-এরও বেশি কাজ করেছেন সফলভাবে। শুধু তাই নয়, এখন তার অধীনে কাজ করছে আরও তিনজন তরুণ—একটি ছোট্ট কিন্তু গর্বিত রিমোট টিম।
রব্বানি আজ শুধু নিজের খাবারের চিন্তা করেন না—পরিবারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বাবা-মা, ভাইবোন—সবার মুখে এখন স্বস্তির হাসি।
এই গল্প শুধু একটি ছেলের সাফল্য নয়, এটি এক অনুপ্রেরণার গল্প। একটি অসম যুদ্ধের জয়গাঁথা। যেখানে দারিদ্র্য ছিল, প্রতিবন্ধকতা ছিল, কিন্তু ছিল না হাল ছেড়ে দেওয়ার অভ্যাস।
গোলাম রব্বাবি প্রমাণ করে দিয়েছেন—আসল শক্তি হাত-পায়ে নয়, মন আর ইচ্ছাশক্তিতে।