আরাফার দিন ইসলামের একটি সর্বোচ্চ মর্যাদার দিন, যাকে ইবাদত, মাগফিরাত ও রহমতের অফুরন্ত সুযোগে ভরা দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। হজের অন্যতম রোকন আরাফার ময়দানে অবস্থান, আর এ দিনটি শুধুমাত্র হাজিদের জন্য নয়, পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিমদের জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
নবিজি মুহাম্মদ ﷺ বলেছেন,
“আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা বিগত বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।”
📚 [সহিহ মুসলিম: ২৬৭৭]
তবে হাজিরা এই দিন রোজা রাখবেন না, কারণ রাসুল ﷺ হজের সময় এদিন রোজা রাখেননি বরং দুধ পান করেন।
📚 [সহিহ মুসলিম: ২৫৫১]
এই দিনটিতে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
নবিজি ﷺ বলেন,
“আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিনে বান্দাদের সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।”
📚 [সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮]
এই দিন শয়তানের জন্য সবচেয়ে লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক দিন, কারণ সে দেখে আল্লাহ বান্দাদের কীভাবে ক্ষমা করছেন।
📚 [মুয়াত্তা মালিক]
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন: দেখো, আমার বান্দারা ধুলিমলিন ও উশকোখুশকো অবস্থায় আমার কাছে এসেছে। আমি তাদের ক্ষমা করেছি।”
📚 [ইবনু খুযাইমা: ২৮৩৯, সহিহ তারগিব: ১১৩২]
আরাফার দিনে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো—
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই; তাঁরই রাজত্ব ও প্রশংসা এবং তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।”
📚 [তিরমিজি: ৩৫৮৫]
এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করার তাগিদ দিয়েছেন নবিজি।
সুরা আ’রাফ ১৭২ আয়াতে বলা হয়েছে:
“আমি কি তোমাদের রব নই?”—তারা বলেছিল, ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমরা সাক্ষ্য দিলাম।’”
📚 [মুসনাদ আহমাদ: ২৪৫১, সহিহুল জামি’: ১৭০১]
এটি ছিল মানবজাতির সাথে আল্লাহর প্রাথমিক অঙ্গীকার, যা নেওয়া হয়েছিল আরাফার ময়দানে।
“আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণ করলাম… ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।”
📚 [সুরা মায়িদাহ: ৩]
উমার (রা.) বলেন, এই আয়াতটি আরাফার ময়দানে, জুমার দিনে অবতীর্ণ হয়েছিল, যেদিন ছিল বিদায় হজ।
📚 [সহিহ বুখারি: ৪৫]
নবিজি ﷺ বলেছেন:
“আরাফার দিন, কুরবানির দিন এবং তাশরিকের দিনগুলো আমাদের ঈদের দিন।”
📚 [নাসায়ি: ৩০০৪]
জিলহজের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতিটি ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব।
🔊 পুরুষরা উচ্চস্বরে বলবে, নারীরা নিচু স্বরে।
📣 তাকবীর:
اللّه أكبر اللّه أكبر اللّه أكبر لا إله إلا اللّه، واللّه أكبر اللّه أكبر ولله الحمد
📚 [ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়া, যাদুল মা‘আদ, রাদ্দুল মুহতার]
আরাফার দিন হলো ক্ষমা, রহমত ও তাকওয়ার পরাকাষ্ঠা প্রকাশের দিন। আমাদের উচিত এই দিনটিকে সর্বোচ্চ ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও জিকিরে পূর্ণ করে তোলা এবং গুনাহ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা।
Muhammad Nechar
Writer